আজ থেকে প্রায় সাড়ে আটশ বছর আগের কথা । মঙ্গোলিয়ার শুস্ক-রুক্ষ পাথুরে তৃণভুমি থেকে ঘোড়ায় চেপে উঠে এলেন ততধিক পাথর-হৃদয়ের একজন মানুষ । তাতার আর আর চীনাদের অত্যাচারের জবাবে নিজেই শুরু করলেন আক্রমণ । নির্মম তলোয়ার আর নিঁখুত তীরের আক্রমণে একে একে জয় করে নিলেন পূর্বের মহাচীন থেকে শুরু করে সিল্করুট ধরে পশ্চিমের বুলগেরিয়া-হাঙ্গেরি পর্যন্ত । পথে রেখে গেলেন একের এক নগরের ধ্বংশবশেষ আর সেসব শহরের লাখ লাখ আবাল-বৃদ্ধা-বণিতার খুলি দিয়ে বানানো মঙ্গোল পিরামিড ! ছোট ছোট শহর তো বটেই তৎকালীন সমৃদ্ধশালী সমরখন্দ আর বুখারা পর্যন্ত এমনভাবে মিশিয়ে দিলেন দিলেন যে পরবর্তিতে দেড়শ বছর পর্যন্ত শহরদুটোতে কোন মানববসতী গড়ে উঠতে পারেনি । নিঁখুতভাবে গুড়িয়ে দিলেন তৎকালীন পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞান-চিকিৎসা আর মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রস্থল ‘বাগদাদ’ । বলা হয় বাগদাদের পোড়া বইয়ের ছাইয়ে টাইগ্রীস নদীর পানি কালো হয়ে ছিল বেশ কয়েকদিন !
মানুষটির নাম ‘তেমুজিন’ । যদিও ‘চেঙ্গিস খান’ নামেই লোকে বেশী চেনে । “মানবজাতীর একটাই পথ । আর তা হলো যুদ্ধ” এই মূলনীতিতে বিশ্বাসী চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পরও কয়েকশ বছর ধরে তাঁর বংশধরেরা চালিয়ে গেছে ধ্বংশের দু:স্বপ্ন ।
এই দু:স্বপ্নের মাঝেই পূর্ব ইউরোপ আর পশ্চিম রাশিয়ার মাঝামাঝিতে সমভূমি থেকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে উঠে আসা শুরু করল বিশালদেহী আরেক উপজাতি নেতা ; নাম তার ‘উসমান’ । এই সামান্য উপজাতি নেতার বংশধরেরাই ক্রমান্বয়ে পত্তন করল এর বিশাল শক্তিশালী সাম্রাজ্যের, যার প্রভাবে মুসলিম ও খ্রীস্টান দুই ধর্মেরই সাম্রাজ্য ইতিহাস লেখা হলো নতুন করে, যার প্রভাব এখনও তীব্রভাবেই রয়ে গেছে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, আইনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রনীতিতে । নাম তার ‘উসমানীয়া সাম্রাজ্য’ কিংবা ইউরোপীয়ানদের ভাষায় ‘অটোম্যান ডাইনেস্টি’ !
.
ইতিহাস কি গল্পের চেয়েও চমৎকার হতে পারে ? পারে তো ! ‘প্রিন্স মোহাম্মদ সজল’-এর ‘সানজাক-ই উসমান’ তেমনই একখানা বই ! চমৎকার ! অসাধারণ।
0 Comments