তামিম ইকবালকে উদ্দেশ্য করে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিল- রান করতে হবে না, ব্যাটিং কর। রান না করলে মরবি না। এইটা খেলা, জীবন না!
এই একটি কথা তামিম ইকবালের জীবনটাই বদলে দিলো। একসময় যে তামিম ইকবাল ব্যাটিং করতে নামলে সবাই স্কোর বোর্ডের উইকেটের দিকে তাকিয়ে ভাবতো-"এই বুঝি গেল, এই বুঝি গেল!" সেই তামিম ইকবালই একদিন বাংলাদেশের ব্যাটিং ভরসা হবে কে জানতো? হয়তো মাশরাফি ঠিকই জানতো...
মাশরাফিকে নিয়ে আমি কখনও লেখার সাহস দেখায়নি, এই মানুষটাকে নিয়ে আসলে লিখে শেষ করা যাবে না। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার এডাম গিলক্রিস্ট মাশরাফি সম্পর্কে একবার বলেছিলেন- "অধিনায়ক তো অনেকেই আছেন, মা আছেন কয়জন?
খেলার মাঠে বাকী দশজন খেলোয়াড়কে বুকের মাঝে আগলে রেখে সাহস যোগানো মা টাই হলো আমাদের মাশরাফি। বার বার হেরে যাওয়া একটি দূর্বল দলকে মাথা উঁচু করে বিশ্বকে চিনিয়ে দেওয়া মানুষটাই হলো আমাদের মাশরাফি।
মাশরাফি সম্পর্কে মাশরাফির বাবা বলেছিলেন- আমার ছেলে শুধু ৫ ওয়াক্ত নামাজই না, তাহাজ্জুদের নামাজও পরে। আল্লাহর রহমতে ওর কোনো বাজে অভ্যাস নেই। ছেলে ইয়াং ছিল, আই সি এল খেলার জন্য ১৬ কোটি টাকা সাধলো, ছেলে বলল-"দেশের জন্য খেলে গরিব থাকলেও খুশি আমি!" পায়ে খুব ব্যাথা, কাউকে বুঝতে দেয় না, লুকিয়ে লুকিয়ে পেইন কিলার খেয়ে খেলতে নামে। ও খুব ইমোশনাল, বাংলাদেশ হারলে একা একা কাঁদে...
সবার মাঝে সাহস যোগানো মানুষটি দল হেরে গেলে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। যাতে অন্যরা মনোবল না হারায়। জগতে লুকিয়ে কান্না করার চেয়ে বড় কষ্ট বোধহয় আর নেই...
আমার ভয় হয়,
খুব ভয় হয় আমার! মাশরাফি চিরকাল থাকবে না, একসময় রঙিন পোষাকে আর দেখা যাবে না মাশরাফি নামক এক যোদ্ধাকে। লিটন সৌম্যরা সেদিন ব্যাটিং করতে গিয়ে ভেঙে পড়লেই পাশ থেকে কানে বেজে উঠবে-" ব্যাটিং কর! রান না করলে মরবি না!" ঘাড়ের রগটা বাঁকা করে লিটনরা ঘুরে দাড়াবে, লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে বল স্টেডিয়ামের ভিতর ফালাবে। মিরাজ রুবেলরা বল করতে গিয়ে যখন দিশা হারিয়ে ফেলবে, তখনই মনে পড়ে যাবে একজন মাশরাফির কথা। পড়েই বলেই উইকেট তুলে নিয়ে তাসকিনরা বুকের সাথে বুক মেলাবে। বেডে শুয়ে শুয়ে টিভি সেটের সামনে বসে মাশরাফি চোখ মুছবে, আনন্দের অশ্রুতে ভিজে যাবে মাশরাফির বুক।
আমরাও একদিন বৃদ্ধ হয়ে যাবো, নাতি নাতনিদের সাথে চানাচুর মুড়ি খেতে খেতে বিশ্বকাপ খেলা দেখবো। বাংলাদেশ হয়তো জিতে যাবে সেদিন। চশমাটা খুলে ভেজা চোখ মুছতে মুছতে নাতি নাতনিদের একটি দুর্বল দলকে বিশ্বকাপ জেতার সাহস যোগানো মাশরাফির গল্প শোনাবে। নাতি নাতনিদের বলবো আমাদের একটা পাগল ছিল রে, যে পাগলটা পঙ্গুত্বের ভয় নিয়েও বাঘের মতো খেলার মাঠে রাজত্ব করতো..
তিনিই একমাত্র সেলেব্রিটি যার কিনা কোন হেটারস নেই। কারন তিনি দেশকে ভালো বাসে আর দেশ তাহাকে।
0 Comments