"ও যেদিন আমাকে বলল ওর পক্ষে ওই মুহূর্তে আমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়, সেদিন আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। বিস্ময় নিয়ে মানুষটার দিকে তাকিয়ে থেকে শুধু নিজেকে জিজ্ঞেস করছিলাম, এ কাকে এতদিন ভালবেসেছি আমি! বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারিনি সেদিন। প্রচন্ড ঘৃণায় চোখে জল চলে এসেছিল আমার। ছুটে বেরিয়ে এসেছিলাম ওর মেস থেকে।
.
.
আমার এবোরশানের এক সপ্তাহ পরেই বাসায় বেশ আয়োজন করে আমাকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসলো। সময়টা বিকেলবেলা। আমি রুমের বাতি নিভিয়ে শুয়ে ছিলাম। আম্মা এসে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, গত ঈদের ওই সালোয়ার কামিজটা পড়ে তাড়াতাড়ি ড্রইংরুমে আসো। মাথায় আর বুকে ভালো করে কাপড় দিয়ে আসবা
আম্মার কথাগুলো আমার কাছে সাপের বিষের মত লাগছিলো। যাই হোক, সেদিনই তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা।
.
.
ঠিক একমাস তেরো দিন পর মোটা অঙ্কের যৌতুকের বিনিময়ে তাঁর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো। বাসর রাতের ঘটনা। সে ঘরে ঢুকেই আমাকে উদ্দেশ্য করে ড্রেসিংটেবিলের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার নাকি খুব খারাপ একটা অতীত ছিল? এবোরশনের ঘটনা তো তোমার বাপে বলেনাই আমাদেরকে। ঘটনা কি সত্য নাকি?
প্রশ্নটা আর কথাগুলো খুবই গায়ে লেগেছিলো আমার। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। কলঙ্কিনীদের নাকি কোন লজ্জা অপমান থাকতে হয় না, আম্মা বারবার করে বলে দিয়েছে। আমি তো কলঙ্কিত। তাই আমি কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকলাম। আমাদের সংসার জীবন শুরু হলো
.
.
ওর ফোন নম্বর আমার মুখস্থ ছিলো। বিয়ের ঠিক বারো দিনের দিন আমি ও কে আমার নতুন নাম্বার থেকে ফোন করলাম। কেন করলাম নিজেও জানি না। ও ফোনটা রিসিভ করে কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো করে রেখে দিলো। লাইনটা কেটে যাবার পরও আমার সেদিন ফোনের বিপ বিপ আওয়াজ শুনতে খুব ভালো লাগছিল। এই ভালো লাগাটা যে খুব একটা ভালো না সেটা আমি জানতাম। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিলো ওই সময়ে আমার ওকেই খুব দরকার ছিল।
.
.
সকাল সাড়ে আটটা থেকে সন্ধ্যে ছয়টা পর্যন্ত সময়টা আমি বাসায় একা একা থাকি। বই পড়ে, টিভি দেখে, বারান্দার গাছগুলোর যত্ন করতে করতে সারাদিন কোনভাবে কেটেই যায়। সন্ধ্যায় সে অফিস থেকে ফেরে, আমি খাবার গরম করতে থাকি। সে গোসল সেরে বেরোয়, আমি ডাইনিং টেবিলে খাবার দাবার সাজাই। সে গোগ্রাসে খায়, আমি বসে থাকি। মাঝেমাঝে ডালের বাটি এগিয়ে দেই। গ্লাসে পানি ঢেলে দেই। এরপর সে বিছানায় যায়, আমিও যাই। আমরা ভালোবাসা করি। যদিও সেটাকে ভালোবাসা বলা যায় না। সে একচেটিয়া চালাতে চালাতে ক্লান্ত হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে যায়, আমি নিথর হয়ে পড়ে থাকি।
.
.
মাঝেমাঝে আমার খুব ওর কথা মনে পড়ে। ও আমাকে খুব যত্ন নিয়ে আদর করতো। খুব আবেগ দিয়ে ভালোবাসতো। ভালবাসা করার সময় ওর গলার স্বর পাল্টে যেতো। আমাকে বিভিন্ন নামে ডাকতো। আমার ঘাড়ে কপালে গালে ও খুব আলতো করে চুমু খেতে পছন্দ করতো। আমি কোন কালারের ব্রা পড়বো সেটা পর্যন্ত ও পছন্দ করে দিতো। আর এদিকে সে আমার আবেগ বা ওই জাতীয় কোন কিছু নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় না। তাঁর কাছে প্রিয় জিনিস বলতে শুধুমাত্র আমার স্তন, আমার যোনি আর আমার আব্বার দেয়া মোটা অঙ্কের যৌতুক। আর কিচ্ছু না!
.
.
আমাকে সে প্রায় দিনই কথা শোনাতো। আমার বাজে অতীত নিয়ে খোঁটা দিতো। একদিন আমার খুব জেদ হলো। মনে হলো, এত ভালো হয়ে থেকে লাভ কি! এম্নিও তো প্রতিদিনই মাটির সাথে মিশে যেতে হয়।
সেদিন সে অফিস চলে যাবার পর ওকে ফোন করলাম। ও ফোন টা রিসিভ করতেই আমি হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। কেন কাঁদলাম সেটা জানি না, আবার হয়তোবা জানি। সে যাক গে, ও আমার কন্ঠস্বর চিনতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। ও কখনও কল্পনাও করেনি আমি ওর সাথে দ্বিতীয়বার কোনোদিন আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবো। প্রায় একঘণ্টা কথা বলার পর আমার ফোনের ব্যালান্স শেষ হয়ে গেলো। লাইনটা কেটে যেতেই ও সাথেসাথে কলব্যাক করলো। আমরা আরও ঘন্টা দুয়েক কথা বললাম। কথা শেষে সে আমার নাম্বারে পাঁচশো টাকা রিচার্জ করে দিলো। ও নাকি ব্যবসা শুরু করেছে। ছোটখাটো ব্যবসা, তবে আয় রোজগার ভালো।
.
.
সে অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে, আমি খাবার গরম করতে থাকি। সে গোসল সেরে বেরোয়, আমি ডাইনিং টেবিলে খাবার দাবার সাজাই। সে গোগ্রাসে খায়, আমি বসে থাকি। মাঝেমাঝে ডালের বাটি এগিয়ে দেই। গ্লাসে পানি ঢেলে দেই। এরপর সে বিছানায় যায়, আমিও যাই। আমরা ভালোবাসা করি; তবে আমার দিক থেকে ওটা শুধুমাত্র দেহদান ছাড়া আর এক বিন্দুও না। এক সময় যখন সে ক্লান্ত হয়ে জলহস্তীর মত শরীরটা নিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমি ফোনে ওর সাথে মেসেজিং করি। অনেক খারাপ খারাপ নোংরা কথাবার্তা থাকে সেসব মেসেজিং এ। সমস্যা নেই, আমি ওকে চিনি। ও এসব নিয়ে কাউকে দেখাবে না। আমি বুঝতে পেরেছি ও আমাকে চায়, তবে বউ হিসেবে নয়। সেই পুরোনো প্রেমিকা হিসেবে। মানে সম্পর্কটা আমিও বুঝি। আমার অবশ্য এক্ষেত্রে আপত্তি নেই। আমরা একে অপরকে চাই। খুব নোংরাভাবে নিষিদ্ধভাবে চাই!"
blogged by anam.
0 Comments